একুশে সিলেট ডেস্ক
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে দুইবার পরিবর্তন করা হয়েছে। এই সময়ে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন তিন নেতা। সবশেষ গত সোমবার সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে।
সোমবার সিলেট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র কয়েস লোদীকে। এর আগে গত ১ আগস্ট সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান দলটির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। আগস্টের আগে প্রায় ১৬ মাস সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন নাসিম হোসাইন। গত বছর মার্চে কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
দ্রুত সময়ের মধ্যে সভাপতি পদে বারবার পরিবর্তনকে দলের ভেতরে অস্থিরতার প্রকাশ বলে মনে করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। যদিও দলটির দলটির দায়িত্বশীলরা তা মানতে নারাজ।
বিএনপির নব ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সম্পাদকীয় পদে থাকা দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহানগর বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি নাসিম হোসাইন দলে তেমন সক্রিয় ছিলেন না। এছাড়া জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সময় তিনি বিদেশে ছিলেন। তাই তার বদলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। তবে স্বল্প সময়ে সভাপতি পদে একাধিকবার পরিবর্তন ভালো লক্ষণ নয়। এতে কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
২০২৩ সালের ১০ মার্চ কাউন্সিলরদের ভোটে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সৈয়দ সাফেক মাহবুব নির্বাচিত হন।
বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সভাপতি নাসিম হোসাইন আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন। ফলে ১ আগস্ট কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীকে।
১ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ‘সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন বিদেশে অবস্থায় করায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) মিফতাহ সিদ্দিকীকে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।’
কাউন্সিলের ২০ মাস পর গত সোমবার (৪ নভেম্বর) সিলেট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি পদে আবার পরিবর্তন আনা হয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নতুন দায়িত্ব পান রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার বিষয়টি জানানো হয়।
১৯৯১ সালে ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে রাজনীতির হাতেখড়ি কয়েস লোদীর। ১৯৯৪ সালে তরুণদল সিলেট জেলা শাখার সভাপতি হন তিনি। এছাড়া ‘৯৬ সালে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, ২০০৯ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, ২০১১ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, ২০১৩ সালে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২০১৬ সালে মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
দায়িত্ব থেকে সরানো প্রসঙ্গে কাউন্সিলরদের ভোটে সিলেট মহানগর বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, “দল আমার উপর অসন্তুষ্ট। গত ১ জুলাই পারিবারিক কাজে আমি দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। ফলে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে আগের সব কর্মসূচিতেই মাঠে ছিলাম।”
নাসিম বলেন, “আমার পদ কিন্তু এখনও খালি আছে। সভাপতির পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব এখন পর্যন্ত কাউকে দেওয়া হয়নি। আমি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আশা করছি, তারা তা বিবেচনায় নেবেন এবং নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে আবার আমাকে স্বপদে ফিরিয়ে নেবেন।”
তিন মাসে তিনবার সভাপতি বদল দলে অস্থিরতার প্রকাশ কী না এমন প্রশ্নে নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, “এটা মোটেই অস্থিরতার প্রকাশ নয়। আমাদের নির্বাচিত সভাপতি নাসিম ভাই দেশের বাইরে থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে দলের আরেক ত্যাগী নেতাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে।”
Leave a Reply